মৌলভীবাজারের একজন ব্যবসায়ী মোঃ. মফিজউদ্দিন বলছেন, ''এতদিন আমরা প্যাকেজ ভ্যাট দিতাম। কিন্তু এ বছর আর সেই ব্যবস্থা থাকছে না। নতুন আইনে ভ্যাটের অনেক কিছু আনা হয়েছে, যা এখনো আমরা বুঝতেই পারছি না।''
তিনি বলছেন, ''সরকার ইসিআর মেশিন দেয়ার কথা বলেছে, কিন্তু এখনো বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানেই এরকম কোন মেশিন দেয়া হয়নি। আমাদের এখানে পরিবেশ এখনো ইউরোপের মতো নয় যে, সবাই ইসিআর মেশিন ব্যবহার করে হিসাবনিকাশ করবে। অবস্থা এমন হয়েছে, যে নতুন আইনের জটিল হিসাব নিকাশ করার জন্য আমাদের এখন হিসাববিদ রাখতে হবে।''
ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের ঘোষণা আসার পরে মি. মফিজউদ্দিনের মতো সংকটে পড়েছেন আরো অনেক ব্যবসায়ী।
ভ্যাট কী?
মূল্য সংযোজন করকে সংক্ষেপে বলা হয় মূসক বা ভ্যাট। কোন ক্রেতা যখন কোন পণ্য বা সেবা কেনেন, তার মূল্যের অতিরিক্ত যে কর দিয়ে থাকেন, সেটাই হচ্ছে ভ্যাট।
ধরা যাক, আপনি ১০০০ টাকা মূল্যের একটি কাপড় কিনলেন। কিন্তু দাম পরিশোধের সময় অতিরিক্ত যে ১৫ শতাংশ হারে কর দিলেন, সেটাই হচ্ছে ভ্যাট।
খুচরা গ্রহীতাদের কাছ থেকে এই ভ্যাট আদায় করে বিক্রেতা সরকারি কোষাগারে জমা দেবেন।
মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন ২০১২
আইনটি ভ্যাট আইন নামেই বেশি পরিচিত, যা ২০১২ সালে অনুমোদন করে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের পরামর্শে (আইএমএফ) তৈরি হওয়া এই আইনটির আইনটির বাস্তবায়ন শুরু হওয়ার কথা ছিল ২০১৭ সাল থেকে।
তবে ২০১৭ সালে আইনটির বাস্তবায়ন দুই বছরের জন্য স্থগিত করা হয়।
ফলে ২০১৯-২০২০ অর্থবছর থেকে, অর্থাৎ পহেলা জুলাই থেকেই আইনটির বাস্তবায়ন শুরু হচ্ছে।
পুরনো আইনের সঙ্গে পার্থক্য কী?
বাংলাদেশে পণ্য বা সেবার ক্ষেত্রে গত প্রায় তিন দশক ধরেই ভ্যাট আদায় করছে সরকার।
প্রথমদিকে নীল চালানের মাধ্যমে ক্রেতার কাছ থেকে ভ্যাট আদায় করা হতো। কিন্তু সেখানে নানা অনিয়ম ও জটিলতার অভিযোগ ওঠার পর পরবর্তীতে ইলেকট্রনিক ক্যাশ রেজিস্টার (ইসিআর) চালু করা হয়।
এখন নতুন আইনে ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) মেশিন চালু করার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।
এতদিন ব্যবসায়ীরা যে অংকের ভ্যাটই আদায় করুক না কেন, ব্যবসা অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট বা প্যাকেজ ভ্যাট সরকারি কোষাগারে জমা দিতেন।
কিন্তু নতুন আইন অনুযায়ী এখন থেকে তারা যে ভ্যাট আদায় করবেন, তাদের সেটাই জমা দিতে হবে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের জ্যেষ্ঠ গবেষক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলছেন, নতুন আইনে আসলে ভ্যাটের কভারেজের বিষয়টি অনেক পরিষ্কার করা হয়েছে।
''এর আগে আইনটি পরিপালনে যথাযথ মেকানিজম ছিল না। ফলে ক্রেতা বা বিক্রেতার, উভয়েরই ভ্যাট ফাঁকি দেয়ার সুযোগ ছিল। ক্রেতা যে ভ্যাট দিচ্ছেন, সেটা ঠিকভাবে কোষাগারে যাচ্ছে কিনা, সেটিও নজরদারি করা যেতো না। এখন পুরো বিষয়টিকে একটা কাঠামোর ভেতর নিয়ে আসা হয়েছে।''
এর আগে মূল আইনে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাটের বিধান থাকলেও নতুন আইনে পণ্য ও সেবা ভেদে আটটি ভ্যাট হার করা হয়েছে। যেমন ২. ২.৪, ৩. ৪.৫, ৫. ৭.৫, ১০ এবং ১৫ শতাংশ। যেমন ওষুধ ও পেট্রোলিয়ামজাত পণ্যের ক্ষেত্রে ভ্যাটের হার হবে ২.৪ শতাংশ এবং ২ শতাংশ।
ফলে বিভিন্ন পণ্য বা সেবা ভেদে ক্রেতারা কম বা বেশি ভ্যাট দেবেন।
নতুন আইনের ফলে ফাঁকি দেয়ার সুযোগ কমে যাবে, ফলে সরকার বেশি রাজস্ব আয় করবে।